কলকাতা শহরের ২৫ মাইল উত্তরে হুগলি
নদীর তীরে অবস্থিত হালিশহর গ্রামে
১৭১৮ সালে। এক তান্ত্রিক বৈদ্য
পরিবারে রামপ্রসাদ সেনের জন্ম।
রামপ্রসাদ সেন এর প্রকৃত জন্মের
তারিখটি জানা যায় নাই। তবে বিভিন্ন
তথ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণ করে পাওয় যায়
রামপ্রসাদ সেন এর জন্ম তারিখ।
রামপ্রসাদের পিতা রামরাম সেন
ছিলেন একজন আয়ুর্বৈদিক চিকিৎসক ও
সংস্কৃত পণ্ডিত। রামপ্রসাদের মা
সিদ্ধেশ্বরী দেবী ছিলেন রামরাম
সেনের দ্বিতীয়া পত্নী। সেকালের
রীতি অনুযায়ী বাল্যকালে
রামপ্রসাদকে একটি সংস্কৃত টোলে
শিক্ষালাভের জন্য প্রেরণ করা হয়।
সেখানে তিনি সংস্কৃত ব্যাকরণ সাহিত্য
ফার্সি ও হিন্দি ভাষা শিক্ষা লাভ
করেন। ছেলেবেলা থেকেই কাব্যরচনা
এবং নতুন ভাষাশিক্ষায় তাঁর আগ্রহ ছিল
প্রবল।রামরাম সেন চেয়েছিলেন পুত্র
রামপ্রসাদ সেন পারিবারিক চিকিৎসক
বৃত্তি গ্রহণ করুক। কিন্তু রামপ্রসাদের
সেদিকে আগ্রহ ছিল না। রামপ্রসাদ সেন
আগ্রহ ছিল আধ্যাত্মিক জীবনযাপন এবং
সুখীও ছিলেন। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে তাঁর
পরিবারবর্গ সর্বাণী নামে এক বালিকার
সঙ্গে বাইশ বছর বয়সী রামপ্রসাদের
বিবাহ দেন। বিবাহের পর পারিবারিক
প্রথানুযায়ী নবদম্পতি কুলগুরু
মাধবাচার্যের নিকট দীক্ষা গ্রহণ করেন।
কথিত আছে দীক্ষাগ্রহণকালে গুরু তাঁর
কানে মন্ত্রপ্রদান করলে তিনি দেবী
কালীর অনুরক্ত হয়ে পড়েন। এক বছর পর
তাঁর গুরুর মৃত্যু হয়। এরপর রামপ্রসাদ
তান্ত্রিক যোগী ও পণ্ডিত কৃষ্ণানন্দ
আগমবাগীশের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ ছিলেন বঙ্গদেশে
কালী আরাধনার প্রবর্তক এবং সুপ্রসিদ্ধ
শাক্ত তন্ত্রগ্রন্থ তন্ত্রসারের রচয়িতা।
আগমবাগীশ রামপ্রসাদকে তন্ত্রসাধনা ও
কালীপূজার পদ্ধতি শিক্ষা দেন।
রামপ্রসাদের পিতামাতা চাইতেন
উপার্জন ক্ষমতা আর্জন করুক কিন্তু
রামপ্রসাদ অধিকাংশ সময়ই সাধনায়
অতিবাহিত করতেন। এমতাবস্থায় রামরাম
সেনের মৃত্যু বরন করেন তখন দারিদ্র্যের
বশবর্তী হয়ে রামপ্রসাদকে বিষয়কর্মে
প্রবৃত্ত হতে হয়। কলকাতায় এসে দুর্গাচরণ
মিত্র নামে এক ধনীর কাছারিতে
মাসিক ত্রিশ টাকা বেতনে কেরানির
কাজ শুরু করেন তিনি। কথিত আছে
কাছারির হিসাবের খাতায় সদ্যরচিত
শ্যামাসঙ্গীত লিখতে শুরু করলে অন্যান্য
কর্মচারীরা তাঁদের মালিকের নিকট
রামপ্রসাদের বিরুদ্ধে নালিশ জানান।
কিন্তু দুর্গাচরণ মিত্র গানগুলি পড়ে
রামপ্রসাদের কবিত্বশক্তিতে মুগ্ধ হয়ে
যান।দুর্গাচরণ মিত্র কবি রামপ্রসাদকে
কেরানির কাজ থেকে অব্যহতি দিয়ে
স্বগ্রামে প্রেরণ করেন এবং তাঁর মাসিক
ভাতার ব্যবস্থা করেন। গ্রামে ফিরে
রামপ্রসাদ কঠোর সাধনায় মগ্ন হন। জানা
যায় এই সময় তিনি আকণ্ঠ গঙ্গাজলে
নিমজ্জিত অবস্থায় শ্যামাসঙ্গীত
গাইতেন। তান্ত্রিক প্রথা অনুযায়ী
তন্ত্রসাধনার আদর্শ পবিত্র এক পঞ্চবটীর
বট বেল আমলকি অশোক ও অশ্বত্থ গাছের
সম্মিলিত রূপ তলায় পঞ্চমুণ্ডীর আসনে
সাপ ব্যাঙ খরগোশ শৃগাল ও মানুষের
করোটীর দ্বারা সৃষ্ট আসন বসে তিনি
ধ্যান ও সাধনা করতেন। লোকবিশ্বাস
দেবী কালী আদ্যাশক্তি মহামায়া রূপে
তাঁকে দর্শন দিয়েছিলেন।নদিয়ার
মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায় রামপ্রসাদের গান
শুনে মুগ্ধ হন। তিনি নিজেও ছিলেন
কালীভক্ত। তাই রামপ্রসাদকে তিনি
সভাকবির মর্যাদা দেন। রামপ্রসাদ অবশ্য
মহারাজের রাজসভায় বিশেষ আসতেন
না। তিনি তন্ত্রসাধনা ও কালীপূজাতেই
অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করতেন।
কৃষ্ণচন্দ্র তাঁকে ১০০ একর নিষ্কর জমি
প্রদান করেন। এর প্রতিদানে রামপ্রসাদ
তাঁর বিদ্যাসুন্দর কাব্য কৃষ্ণচন্দ্রকে উৎসর্গ
করেন। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রামপ্রসাদকে
কবিরঞ্জন উপাধিও প্রদান করেছিলেন।
মহারাজের অন্তিম সময়ে রামপ্রসাদ তাঁর
পাশে থেকে তাঁকে কালীর নামগান
শুনিয়েছিলেন। আরও জানা যায় নবাব
সিরাজদ্দৌলা ও সুফি সন্তেরাও
রামপ্রসাদের আধ্যাত্মিক সংগীতে মুগ্ধ
হন। নবাবের অনুরোধে রামপ্রসাদ একবার
তাঁর সভাতেও গিয়েছিলেন। বাংলার
ঘরে ঘরে রামপ্রসাদ সম্পর্কিত নানান
কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। এগুলির মধ্যে
রামপ্রসাদের বেড়া বাঁধার গল্পটি বেশ
জনপ্রিয়। এই কাহিনি অনুসারে কালী
রামপ্রসাদের কন্যা জগদীশ্বরীর রূপে
এসে কবিকে ঘরের ভাঙা বেড়া বাঁধতে
সাহায্য করেছিলেন। রামপ্রসাদ পরে
বুঝতে পারেন যে তাঁর ইষ্টদেবীই কন্যার
বেশে এসে তাঁকে সাহায্য করেন।
আরেকটি জনপ্রিয় কিংবদন্তি হল
বারাণসী যাত্রাকালে রামপ্রসাদের
দেবী অন্নপূর্ণার দর্শন লাভ। একবার
তিনি গঙ্গাস্নান সেরে নিত্যপূজার
কাজে চলেছেন এমন সময় একটি সুন্দরী
মেয়ে রামপ্রসাদের কাছে গান শোনার
আবদার ধরে। পূজার দেরি হয়ে যাচ্ছে
দেখে রামপ্রসাদ মেয়েটিকে একটু
অপেক্ষা করতে বলেন। কিন্তু পরে ফিরে
এসে তাকে আর দেখতে পান না। পরে
তিনি ধ্যানে এক দিব্যজ্যোতি দর্শন
করেন এবং দেবীর কণ্ঠস্বর শোনেন আমি
অন্নপূর্ণা । আমি বারাণসী থেকে তোর
গান শুনতে এসেছিলাম। কিন্তু হতাশ হয়ে
ফিরে যাচ্ছি। রামপ্রসাদ নিজের উপর
ক্রুদ্ধ হন। তখনই দেবী অন্নপূর্ণাকে গান
শোনাবার মানসে কাশীধামের
উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। কিন্তু ত্রিবেণী
সংগমে এসে তাঁর পুনরায় দিব্যজ্যোতি
দর্শন হয়। দেবীর কণ্ঠে তিনি শুনতে পান
এখানেই আমাকে গান শোনা।
বারাণসীই আমার একমাত্র নিবাস নয়
আমি সমগ্র জগৎ চরাচরে অবস্থান করি।
অষ্টাদশ শতাব্দীর বাংলার ভক্তি
আন্দোলনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব
হলেন রামপ্রসাদ সেন। তিনিই বাংলায়
ভক্তিবাদী শাক্তধর্ম ও দেবী কালীর
লীলাকীর্তন শ্যামাসংগীতের
ধারাটিকে জনপ্রিয় করে তোলেন।
রামপ্রসাদ সেনই প্রথম কবি যিনি এই
প্রকার গভীর ভক্তিসহকারে দেবী কালীর
লীলাকীর্তন গান রচনা করেন। তাঁর
গানেই প্রথম কালীকে স্নেহময়ী মাতা
এমনকি ছোটো মেয়ের রূপেও দেখা যায়।
তাঁর পরে একাধিক শাক্ত কবি এই
কালীভক্তি প্রথাটিকে উজ্জীবিত করে
রাখেন। কীর্তন বাংলার লোকসঙ্গীত
বাউল গানের সঙ্গে ভারতীয় শাস্ত্রীয়
সঙ্গীতের সুরের মিশ্রণে রামপ্রসাদ
বাংলা সংগীতে এক নতুন সুর সৃষ্টি করেন।
পরবর্তী দেড়শো বছরে শতাধিক কবি
সংগীতকার এই সুরে গান রচনা
করেছিলেন। তাঁর কাব্য ছিল মধুর যদিও এই
সব গান লোকসুরের বদলে শাস্ত্রীয়
ধারায় গাওয়ারই রীতি প্রচলিত ছিল।
একই ধারায় সংগীতরচনাকারী তাঁর দুই
বিশিষ্ট উত্তরসূরি হলেন কমলাকান্ত ও
মহেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। রামপ্রসাদের
গান রামপ্রসাদী নামে পরিচিত।
তৎকালীন বাংলায় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর
আর্থিক দুরবস্থা ও গ্রামীণ সংস্কৃতির
অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপটে এই কালীভক্তি
আন্দোলনের উদ্ভব হয়। তাঁর গানেও এই
সকল ঘটনার প্রভাব সুস্পষ্ট। এই কারণে
তাঁর জীবদ্দশাতেই গানগুলি ব্যাপক
জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।রামপ্রসাদের
রচনাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য
বিদ্যাসুন্দর বা কালিকামঙ্গল অষ্টাদশ
শতাব্দীর ষষ্ঠ অথবা সপ্তম দশক
কালীকীর্তন কৃষ্ণকীর্তন নামক অসম্পূর্ণ
খণ্ডকাব্য ও শক্তিগীতি। কালীকীর্তন
গ্রন্থে গীতিকবিতা ও আখ্যানমূলক
কবিতার মাধ্যমে উমার জীবনকাহিনি
বর্ণিত হয়েছে। কৃষ্ণকীর্তন অসম্পূর্ণ রচনা।
এই গ্রন্থে গান ও কবিতার মাধ্যমে
কৃষ্ণের জীবনকথা বর্ণিত হয়েছে। এর
সম্পূর্ণ অংশটি পাওয়া যায় না।
বিদ্যাসুন্দর রাজকুমারী বিদ্যা ও
রাজকুমার সুন্দরের বহুপ্রচলিত প্রেম ও
পরিণয়কাহিনি অবলম্বনে রচিত। সেই
যুগে এই কাহিনিটি বাংলায় খুবই
জনপ্রিয় ছিল। রামপ্রসাদ লিখেছেন
বিদ্যা ও সুন্দরে প্রেম ও পরিণয় দেবী
কালীর সহায়তায় ঘটেছিল। শক্তিগীতি
রামপ্রসাদের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য
ও প্রসিদ্ধতম রচনা। এই গানগুলির মধ্যে
দেবী কালীর প্রতি তাঁর গভীর প্রেম ও
শ্রদ্ধাবোধ প্রস্ফুটিত হয়েছে।
শক্তিগীতির গানগুলির কালীর সঙ্গে
কবির সম্পর্ক মা ও সন্তানের সম্পর্ক।
এখানে দেবীর মনুষ্যসন্তান কবি তাঁর
মায়ের সঙ্গে ভাবভালবাসা এমনকি
কোথাও কলহ পর্যন্ত করেছেন।ঊনবিংশ
শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি ধর্মগুরু
রামকৃষ্ণ পরমহংস প্রায়শই রামপ্রসাদী
গান গাইতেন। রামপ্রসাদ ছিলেন তাঁর
প্রিয় কবি। তাঁর গাওয়া রামপ্রসাদীগুলি
শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত গ্রন্থে মুদ্রিত
হয়েছে। এই গ্রন্থে লেখা আছে.তিনি
রামকৃষ্ণ ঘণ্টার পর ঘণ্টা অতিবাহিত
করতেন কমলাকান্ত ও রামপ্রসাদের
লেখা দিব্যজননীর লীলাসঙ্গীত গেয়ে।
এই আনন্দময় গানগুলি ঈশ্বরের প্রত্যক্ষ
ভাবের বর্ণনাকারী রামকৃষ্ণ পরমহংস
যোগানন্দও রামপ্রসাদ ও তাঁর
ভক্তিগীতির গুণগ্রাহী ছিলেন। তিনিও
প্রায়ই এই গানগুলি গাইতেন।ভগিনী
নিবেদিতা রামপ্রসাদ সেনের সঙ্গে
ইংরেজ কবি উইলিয়াম ব্লেকের তুলনা
করেন। বৃদ্ধ বয়সে রামপ্রসাদের
দেখাশোনা করতেন তাঁর পুত্র রামদুলাল
ও পুত্রবধূ ভগবতী। রামপ্রসাদের মৃত্যু নিয়ে
একটি কিংবদন্তি প্রচলিত আছে।
রামপ্রসাদ প্রতি বছর দীপান্বিতা
অমাবস্যায় কালীপূজা করতেন। একবার
সারারাত পূজা ও গানের পর সকালে
কালীপ্রতিমা মাথায় করে নিয়ে
বিসর্জনের পথে বের হন রামপ্রসাদ।
ভক্তগণ তাঁর পিছন বিসর্জন
শোভাযাত্রায় অংশ নেন। স্বরচিত
শ্যামাসঙ্গীত গাইতে গাইতে গঙ্গার
জলে প্রতিমা বিসর্জনার্থে অবগাহন
করেন রামপ্রসাদ। প্রতিমা বিসর্জনের
সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর প্রাণ বহির্গত হয় ১৭৭৫
সালে।
Monday, May 21, 2018
★সাধক রামপ্রসাদ সেন ★
Sunday, May 20, 2018
★নবগ্রহ স্তব ও গায়ত্রী মন্ত্র★
যারা অশুভ শক্তিকে পরাভুত করতে চান
তাদের জন্য নবগ্রহ স্তব ও গায়ত্রী মন্ত্র জপ করা অপরিহার্য।
★ নবগ্রহ স্তব বিধি (নবগ্রহ স্তোত্রম্)★
------------------------------------------------
জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্।
ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্।।
দিব্যশঙ্খতুষারাভং ক্ষীরোদার্ণব সম্ভবম্।
নমামি শশিনং ভক্ত্যা শম্ভোর্মুকুট ভূষণম্।।
ধরণীগর্ভসম্ভুতং বিদ্যুৎপুঞ্জসমপ্রভম্।
কুমারং শক্তিহস্তষ্ণ লোহিতাঙ্গং নমাম্যহম্।।
প্রিয়ঙ্গুকলিকাশ্যামং রূপেণাপ্রতিমং বুধম্।
সৌম্যং সর্বগুণোপেতং নমামি শশিনঃ সুতম্।।
দেবতানামৃষীণাঞ্চ গুরুং কনকসন্নিভম্।
বন্দ্যভূতং ত্রিলোকেশং তং নমামি বৃহস্পতিম্।।
হিমকুন্দমৃণালাভং দৈত্যানাং পরমং গুরুম্।
সর্বশাস্ত্র প্রবক্তারং ভার্গবং প্রণমাম্যহম্।।
নীলাঞ্জনচয়প্রখ্যং রবিসুতং মহাগ্রহম্।
ছায়ায়া গর্ভসম্ভুতং বন্দে ভক্ত্যা শনৈশ্চরম্।।
অর্দ্ধকায়ং মহাঘোরং চন্দ্রাদিত্যবিমর্দ্দকম্।
সিংহিকায়াঃ সূতং রৌদ্রং ত্বং রাহুং প্রণমাম্যহম্।।
পলালধুমসঙ্কাশং তারাগ্রহবিমর্দ্দকম্।
রৌদ্রং রুদ্রাত্মকং ক্রুরং তং কেতুং প্রণমাম্যহম্।।
★ নবগ্রহের গায়ত্রী মন্ত্র★
(১) রবি (সূর্য) গ্রহ -- ওঁ ভাস্করায় বিদ্মহে মহাতেজায় ধীমহিঃ তন্নঃ সূর্যঃ প্রচোদয়াৎ।
(২) সোম (চন্দ্র) গ্রহ -- ওঁ ক্ষীরপুত্রায় বিদ্মহে অমৃতত্বায় ধীমহিঃ তন্নঃ চন্দ্রঃ প্রচোদয়াৎ।
(৩) মঙ্গল গ্রহ - ওঁ অঙ্গরকায় বিদ্মহে শক্তিহস্তায় ধীমহিঃ তন্নঃ ভৌমঃ প্রচোদয়াৎ।
(৪) বুধ গ্রহ -- ওঁ সৌম্যরূপায় বিদ্মহে বাণেশায় ধীমহিঃ তন্নঃ বুধঃ প্রচোদয়াৎ।
(৫) বৃহস্পতি গ্রহ -- ওঁ আঙ্গিরসায় বিদ্মহে দণ্ডায়ুধায় ধীমহিঃ তন্নঃ জীবঃ প্রচোদয়াৎ।
(৬) শুক্র গ্রহ -- ওঁ ভৃগুসুতায় বিদ্মহে দিব্যদেহায় ধীমহিঃ তন্নঃ শুত্রঃ প্রচোদয়াৎ।
(৭) শনি গ্রহ -- ওঁ সূর্যপুত্রায় বিদ্মহে মৃত্যুরূপায় ধীমহিঃ তন্নঃ সৌরিঃ প্রচোদয়াৎ।
(৮) রাহু গ্রহ -- ওঁ শিরোরূপায় বিদ্মহে অমৃতেশায় ধীমহিঃ তন্নঃ রাহুঃ প্রচোদয়াৎ।
(৯) কেতু গ্রহ -- ওঁ গদাহস্তায় বিদ্মহে অমৃতেশায় ধীমহিঃ তন্নঃ কেতুঃ প্রচোদয়াৎ।
★ গ্রহ বীজ মন্ত্র★
----------------------
সূ্র্য্য মন্ত্র -- ওঁ হ্রীং হ্রীং সূর্য্যায়ঃ।
জপ সংখ্যা ৬০০০ বার।
দেবতা-মাতঙ্গী। ধূপ-গুগুল।
বার-রবিবার।
প্রশস্ত- সকাল ১২ টা পর্যন্ত।
চন্দ্র মন্ত্র -- ওঁ ঐং ক্লীং সোমায়ঃ।
জপ সংখ্যা ১৫০০০ বার।
দেবতা-কমলা।
ধূপ- সরলকাষ্ঠ।
বার-সোমবার।
প্রশস্ত-সন্ধা ৬-৯ পর্যন্ত।
মঙ্গল মন্ত্র -- ওঁ হুং শ্রীং মঙ্গলায়ঃ।
জপ সংখ্যা-৮০০০ বার।
দেবতা-বগলামুখী।
ধূপ-দেবদারু।
বার-মঙ্গলবার।
প্রশস্ত-সকাল ১২ টা পর্যন্ত।
বুধ মন্ত্র -- ওঁ ঐং স্ত্রীং শ্রীং বুধায়ঃ।
জপ সংখ্যা-১০০০০ বার।
দেবতা-ত্রিপুরাসুন্দরী।
ধূপ-সঘৃত দেবদারু।
বার-বুধবার।
প্রশস্ত-বেলা ১২টা পর্যন্ত।
বৃহস্পতি মন্ত্র -- ওঁ হ্রীং ক্লীং হুং বৃহস্পতয়ে।
জপ সংখ্যা-১৯০০০ বার।
দেবতা-তারা। ধূপ-দশাঙ্গ।
বার-বৃহস্পতিবার।
প্রশস্ত-বেলা ১২ পর্যন্ত।
শুক্র মন্ত্র --ওঁ হ্রীং শুক্রায়ঃ।
জপ সংখ্যা-২১০০০ বার।
দেবতা-ইন্দ্র।
ধূপ-গুগ্গুল।
বার-শুক্রবার। প্রশস্ত-সন্ধ্যাবেলা।
শনি মন্ত্র -- ওঁ ঐং হ্রীং শ্রীং শনৈশ্চরায়ঃ।
জপ সংখ্যা ১০০০০ বার।
দেবতা-দক্ষিনাকালী।
ধূপ-কৃষ্ণাগুরু।
বার শনিবার।
প্রশস্ত সন্ধ্যাবেলা।
রাহু মন্ত্র -- ওঁ ঐং হ্রীং রাহবে।
জপ সংখ্যা-১২০০০ বার।
দেবতা-ছিন্নমস্তা।
ধূপ-দারুচিনি।
বার-শনি/মঙ্গল বার।
প্রশস্ত সন্ধ্যাবেলা।
কেতু মন্ত্র - ওঁ হ্রীং ঐং কেতবে।
জপ সংখ্যা-২২০০০ বার।
দেবতা-ধূমাবতী।
ধূপ-মধূযুক্ত দারুচিনি ।
বার - শনি/মঙ্গল বার।
প্রশস্ত সন্ধ্যাবেলা।
লেখক-শ্রী পৃথ্বীশ ঘোষ
★৩৩ কোটি দেবতা★
হিন্দু ধর্ম কি ৩৩ কোটি দেবতার পূজা করে? ৩৩ কোটি সংখ্যাটি প্রায়শই শোনা যায় যখন হিন্দু ধর্মীয় দেবতাদের নিয়ে কোন আলোচনা হয়ে থাকে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এধরনের আলোচনা যারা শুরু করেন তাঁরা হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে কিছুই জানেন না বা জেনে থাকেন না, এবং বস্তুত পক্ষে খোঁচানোই তাঁদের মুল লক্ষ্য থাকে এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে হিন্দু দেব-দেবীর সংখ্যার পেছনের রুপক অর্থ তাঁরা এড়িয়ে যান।
৩৩ কোটি দেবতা মূলত রুপক অর্থে ব্রাহ্মণ (চিরন্তন সত্য) কে উপস্থাপন করে, যা ভিন্ন রূপে, ভিন্ন নামে, ভিন্ন প্রকারে ও শক্তির বহিঃপ্রকাশ। সকল সাকার, নিরাকার অথবা যা অপ্রকাশিত, প্রকৃতপক্ষে চিরন্তন সত্যেরই প্রকাশ।
এটি জানা কথা যে ৩৩ কোটি দেবতার পূজা করা সম্ভব নয়। কিন্তু কেন এই ৩৩ সংখ্যা? বৃহদারণ্যক উপনিষদে ব্রাহ্মণ নিয়ে আলোচনায় যাজ্ঞবল্ক্য কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল ঈশ্বরের সংখ্যা কত? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন তিন শত তিন এবং তিন হাজার তিন। যখন প্রশ্নটি আবার করা হল, তখন তিনি বললেন তেত্রিশ। আবার যখন প্রশ্নটি করা হল, তিনি বললেন ছয়। এভাবে অনেকবার প্রশ্নটি করা হয়ে যাবার পর একদম শেষে তিনি বললেন এক। – (অধ্যায় ১, স্তবক ৯, শ্লোক ১)।
৩৩ সংখ্যাই এসেছে মূলত বৈদিক দেবতাদের সংখ্যা থেকে, যা যাজ্ঞবল্ক্য বর্ণনা করেছেন বৃহদারণ্যক উপনিষদে। – অষ্ট বসু, এগার রুদ্র, বারোনআদিত্য, ইন্দ্র এবং প্রজাপতি। – (অধ্যায় ১, স্তবক ৯, শ্লোক ২)।
পরবর্তীতে প্রাচীন মানুষ এই ৩৩ এর পেছনে সর্বোচ্চ সংখ্যক শূন্য যোগ করে দেয়, যত সংখ্যক জীব পৃথিবীতে আছে বলে তারা মনে করতেন। তো, পরবর্তীতে কেউ হিন্দু ধর্মের ৩৩ কোটি দেবতার বিষয়টি আলোচনায় আনলে, সংখ্যাটিকে ধরে নিতে হবে বক্তা, শ্রোতাগণ এবং এই বিশ্বের জীবিত বা মৃত সকল কিছু সহ। আসলে আমাদের প্রাচীন ভবিষ্যৎ বক্তাদের সেই রুপক সংখ্যা আজকের বিশ্বের হিসাবে বিলিয়নে পৌঁছে যাবার কথা।
মিলিয়ন বা বিলিয়ন, প্রকৃতপক্ষে এগুলো আসলে এক ঈশ্বর বাদের ধারনাকেই প্রকাশ করে, যাকে হিন্দুরা ব্রহ্ম (চিরন্তন সত্য) নামে চেনে, এছাড়া আর কিছুই নয়।
-
ভগবান শ্রী কৃষ্ণ শ্রীমদ্ ভগবত গীতায় বলেছেন --
• আমিই লক্ষ্য, আমিই ভক্ত, আমিই রাজা, আমি সাক্ষী, আমিই অধিবাসী, আমিই আর্ত, আমিই বন্ধু, আমিই সকল কিছুর কারণ, আমিই দ্রবীভবন, আমিই মুল, আমিই নিম্নস্থ স্তর, এবং আমিই অবিনাশী বীজ. (অধ্যায় ৯, মন্ত্র ১৮)
• আমিই সকল কিছুর কারন, হে অর্জুন, সাকার– নিরাকার এমন কিছুই নেই যা আমাকে বাদ দিয়ে সম্ভব.(অধ্যায় ১০, মন্ত্র ৩৯)
• হে অর্জুন, আমাকে সকল সৃষ্টির মুল বলে জানবে. (অধ্যায় ৭, মন্ত্র ১০)
---- একারনেই হিন্দুরা এই অসংখ্য ভাবে পূজা করে থাকেন। .........
লেখক-শ্রী পৃথ্বীশ ঘোষ
(৮৭৭৭৬৩৮৯৯২)